,

তদন্ত করতে গিয়ে মৃত আছমাকে জীবিত দেখে হতভম্ব পুলিশ! লম্পট রমজানকে এখনো পলাতক

আব্দুল হামিদ ॥ হবিগঞ্জ ল কলেজের ছাত্রী চুনারুঘাটের আছমার শারিরীক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। এদিকে এখনো পুলিশ রমজান আলীকে ধরতে না পারলেও তার মৃত্যুর তদন্ত করতে বাড়িতে গিয়ে দেখতে পায় আছমা মারা যায়নি। এ নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার বেশ কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয় হবিগঞ্জ ল কলেজের ছাত্রী আছমা ৫ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মারা গেছে। এমন খবর পেয়ে চুনারুঘাট থানার এসআই হারুনুর রশীদ বিষয়টি তদন্ত করতে গতকাল আছমার বাড়ি যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পান আছমা মারা যায়নি জীবিত রয়েছে। এ ঘটনায় তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েন এবং সাংবাদিকদের কাছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রকৃত খবরটি জানতে চাওয়া হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১১ সালের ২০ জুন রমজান আলীর চুনারুঘাট উপজেলা রোড কম্পিউটার দোকানে নিয়ে এক কলেজ ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণটি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়। এব্যাপারে ওই ছাত্রীর পিতা হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে কোর্টে মামলা করলে রমজান আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ কারাগারে প্রেরণ করে। দীর্ঘ ৬ মাস হাজতবাস করার পর অবশেষে ৭০ হাজার টাকা ওই ছাত্রীর পিতাকে জরিমানা দিলে তাকে বিয়ের শর্তে রমজান আলীর জামিন হয়। এরপর রমজান ওই ছাত্রীকে বিয়ে না করে সটকে পড়ে। এ ফাঁকে তার দোকান বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে নাম পরিচয় গোপন রেখে রাজমিস্ত্রির কাজ নেয়। ২০১২ সালের আগস্ট মাসে পূর্ব পাকুড়িয়া পর্দানিয়া বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ নেয়। এ সুবাদে পরিচয় হয় ওই গ্রামের মৃত হাজি নুরুল ইসলামের কন্যা বৃন্দাবন কলেজের ২য় বর্ষের আছমা আক্তার (৩০) এর। একদিন সুযোগমতে পেয়ে আছমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। আছমা বলে বামন হয়ে চাঁদ ধরার শখ। আরেকদিন এ কথা বললে মজা শিখাইয়া দেব। এরপর ক্রমাগতভাবে রমজান আছমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল। এক পর্যায়ে আছমা তার প্রেমে পড়ে যায় এবং পরিবারের অমতে রমজান আলীকে বিয়ে করে। এরপর আছমার বাড়িতে জায়গা না পেয়ে চুনারুঘাটে বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার শুরু করে। অভাব অনটনের কারণে আছমা প্রাণ কোম্পানীতে চাকুরী নেয়। এরপর চলে আসে আছমার উপর যৌতুকের নির্যাতন। পাষন্ড স্বামী রমজান আলীর কাছ থেকে বাঁচতে আছমা আদালতে মামলা করে। এরপর রমজান ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। গত ৫ জুন সন্ধ্যায় চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের গহীন অরণ্যে নিয়ে রমজান ও তার দুই বন্ধু আছমার উপর শারিরীক নির্যাতন চালিয়ে হত্যার জন্য ক্ষুর দিয়ে সারা শরীরে উপর্যুপুরি আঘাত করে মৃত্যু হয়েছে ভেবে পালিয়ে যায়। পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে হবিগঞ্জ এরপর আশংকাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এ রিপোর্ট লেখাকালে আছমার পরিবার জানান, গতকাল শুক্রবার দুপুরে আছমাকে বাড়িতে আনা হয়েছে। তবে কয়েকটি পত্রিকায় আছমার মৃত্যু হয়েছে খবর শুনে তারা হতভম্ব হয়ে পড়েন। তারা এ প্রতিবেদককে বলেন, সংবাদটি প্রকাশের আগে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা উচিত ছিল। প্রকৃত ঘটনা না জেনেই স্থানীয় সংবাদকর্মীরা আছমার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের কারণে আছমার আত্মীয় স্বজনসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ ছুটে আসেন তাদের বাড়িতে। এছাড়া তার বোন স্বরাষ্ট ্রমন্ত্রনালয়ের উপসচিব হাজেরা পারভীন ও ভাই ইনকাম ট্যাক্স কর্মকর্তা জামান চৌধুরীও বাড়িতে আসেন। অপরদিকে আছমার মৃত্যুর খবর পত্রিকায় দেখে বোন শ্রীমঙ্গল সদরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী অনুফা বেগম স্ট্রোক করেছেন। তাকে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তার অবস্থাও আশংকাজনক। এদিকে থানার ওসি অমূল্য কুমার চৌধুরী জানান, রমজানকে ধরতে অভিযান চলছে। আশা করি ধরা পড়বে। সে হাতুন্ডা গ্রামের হাজী নিম্বর আলীর পুত্র।


     এই বিভাগের আরো খবর